স্বদেশ ডেস্ক:
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহতের ঘটনার পর উপজেলার বসুরহাটে ফের ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিয়াউল হক মীর। তিনি জানান, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় পৌরসভা জুড়ে ১৪৪ ধারার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
মো. জিয়াউল হক মীর এ ব্যাপারে আরও বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ও সংঘর্ষের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় আজ বুধবার ভোর ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বসুরহাট পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এ আদেশ চলাকালে পৌর এলাকায় ব্যক্তি, সংগঠন, রাজনৈতিক দল, গণ জমায়েত, সভা, সমাবেশ, মিছিল, র্যালি, শোভাযাত্রা, যেকোনো ধরনের অনুষ্ঠান এবং রাজনৈতিক প্রচার প্রচারণা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সাথে পৌর শহরে ৪জনের বেশি লোক জমায়েত হতে পারবে না।’
এর আগে রাতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আলাউদ্দিন (৩২) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার চর ফকিরা ইউনিয়নের চর কালি গ্রামের মমিনুল হকের ছেলে। স্থানীয় সূত্রগুলো দাবি করছে, নিহত আলাউদ্দিন মিজানুর রহমানের অনুসারী।
একই ঘটনায় আহত হন অর্ধ শতাধিক। গুরুতর আহত অবস্থায় ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসেনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, অন্যান্য আহতরা স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের স্থগিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমানের (বাদল) সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সংঘর্ষের সময় গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
কাদের মির্জা ও মিজানুর রহমানের অনুসারীদের মধ্যে গতকাল বিকেলের পর রাতেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রথম সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে বসুরহাট পৌরসভার রূপালী চত্বর এলাকায়। এ সংঘর্ষের জেরে রাতে আবার সংঘর্ষে জড়ায় উভয় পক্ষ।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী সংঘর্ষের ঘটনা:
গত সোমবার বিকেলে বসুরহাট রূপালী চত্বরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খানের ওপর মেয়র আবদুল কাদের মির্জার লোকজন হামলা ও মারধর করে। এর প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় রূপালী চত্বরে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগের একাংশ (মিজানুর রহমান বাদল গ্রুপ)। সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিজানুর রহমান বাদল বক্তব্য দিচ্ছিলেন। থানার পশ্চিম পাশের সড়ক (মাকসুদা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) দিয়ে সে সময় সভায় হামলার চেষ্টা চালায় কাদের মির্জার সমর্থকরা। এ সময় একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটলে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় সভা। বাদলের সমর্থকরা কাদের মির্জার লোকজনকে ধাওয়া দিলে শুরু হয় উভয় পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সংঘর্ষকারীরা কয়েকটি দোকান ও রাস্তায় থাকা যানবাহনে ভাঙচুর চালায়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হন কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনিসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য। এক পর্যায়ে কাদের মির্জার পক্ষের লোকজন বসুরহাট পৌরসভা কার্যালয়ে এবং মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকরা উপজেলা চত্বরে অবস্থান নেয়। নতুন করে সংঘর্ষ এড়াতে শহরজুড়ে বিপুলসংখ্যক র্যাব, পুলিশ, ডিবি পুলিশ, দাঙ্গা পুলিশ টহল দিচ্ছিল। এরই মধ্যে রাত ১০টার দিকে মিজানুর রহমান বাদলের লোকজন একযোগে এসে বসুরহাট পৌরসভা কার্যালয়ে গোলাগুলি শুরু করে। কার্যালয়ে অবস্থান নেওয়া কাদের মির্জার অনুসারী অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হন। এ ছাড়া ককটেল বিস্ফোরণ ও ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হন আরও অন্তত ৫০ জন। গুলিবিদ্ধদের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা আলাউদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
সংঘর্ষের জন্য দুইপক্ষই প্রতিপক্ষকে দায়ী করেছে। সংঘর্ষের বিষয়ে কাদের মির্জার অনুসারী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের বলেন, ‘প্রতিপক্ষ বাদল গ্রুপের লোকজন ভয়াবহ এ তাণ্ডব চালিয়েছে। তাদের গোলাগুলিতে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।’
তবে, এ নিয়ে কথা বলার জন্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলের মোবাইলে বারবার কল দেওয়া হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আলাউদ্দিন নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সংঘর্ষে উভয় পক্ষের লোকজনই আহত হয়েছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বসুরহাট বাজারে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এই দুই পক্ষের সংঘর্ষেই গুলিবিদ্ধ হয়ে সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কিরের মৃত্যু হয়। তিন সপ্তাহ পার না হতেই আবারও নিহতের ঘটনা ঘটলো পৌরসভায়।